লেটস্ স্টার্ট করোনা ড্যান্স। বক্তা মাত্র চার বছরের এক শিশু। দিদিমার সাথে খেলা করতে করতে মিউজিক্যাল কীবোর্ডে চাপ দিয়ে। কী অমোঘ উচ্চারণ! আসুন করোনা নাচ নাচি। সরকার বলেছে আসুন সকলে মিলে করোনা নাচ নাচি। ডাক্তার বলছে আসুন সকলে মিলে করোনা নাচ শুরু করে দিই। না হলে এই মহামারী সামলানো যাবে না। মিডিয়া বলছে লেটস্ স্টার্ট করোনা ড্যান্স। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা তো কবেই বিশ্ব শুদ্ধ মানুষকে এই করোনা নৃত্যের আসরে নামিয়ে দিয়েছে। নাচের ধরণ কি হবে। নাচের ছন্দ কি হবে। নাচের তাল লয় কখন কোন কোন পর্যায়ে পৌঁছাবে। সব আগে থেকে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কে বা কারা বেঁধে দিয়েছে, সেটা যদিও ওপেন সিক্রেট। কিন্তু না, সেসব বিষয় নিয়ে ঘুণাক্ষরেও আলোচনা করা যাবে না। করলে বিগ বসের গোঁসা হবে। বিগ বসের হাতের তালুর ভিতরে এখন গোটা বিশ্ব। মিডিয়া আগেভাগে একেবারে প্রথমেই সতর্ক করে দিয়েছিল। করোনা নৃত্যের ভিতর দিয়েই আমরা পৌঁছিয়ে যাবো এক নতুন পৃথিবীতে। যে পৃথিবীর গাল ভরা নাম “নিউ নরম্যাল”। আমরা যে যতটা করনো নৃত্যে পারদর্শী, সেই তত মহানন্দে এই নতুন বিশ্ব সম্বন্ধ ততধিক উৎসাহিত। মুখে মুখে আমাদের খই ফুটছে তাই নিউ নরম্যাল নিউ নরম্যাল বলে। করোনা নৃত্যের তালে তালে দিনে দিনে নিউ নরম্যাল তাথৈ নৃত্যে জড়িয়ে নিচ্ছে আমাদেরকে। সত্যিই তো করোনা নৃত্য আবিষ্কারের আগের পৃথিবী আর আবিষ্কারের পরের পৃথিবী কি আর এক হতে পারে? বিশ্বায়ন নিয়েও একসময় আমাদের তাথৈ নৃত্য মাতাল হয়ে উঠেছিল। সেই নৃত্যের তালেই কিন্তু করোনা ড্যান্সেরও জন্ম। ফলে বিশ্বায়ন যদি সলতে পাকানোর পর্ব হয়। তবে এই নিউ নরম্যাল খেলা শুরুর প্রথম পর্যায়। কিন্তু খেলাটা কি?
ওয়ান ওয়ার্ল্ড ওয়ান সিস্টেম। সৌজন্যে বিগ বস। নিউ নরম্যালই হবে এই নতুন পৃথিবীর আসল চেহারা। কেউ বাদ যাবে না। কেউ আলাদা পড়ে থাকবে না। সবাইকে নিয়েই এই খেলার শুরু। সবাইকে নিয়ে খেলতে খেলতেই এক পৃথিবী মানুষ পৌঁছিয়ে যাবে এই নতুন পৃথিবীতে। যার গাল ভরা নাম নিউ নরম্যাল। আর করোনা ড্যান্সই হলো সেই খেলায় প্রবশের ছাড়পত্র। তাই লেটস্ স্টার্ট করোনা ড্যান্স। না হলে ওয়ান ওয়ার্ল্ড ওয়ান সিস্টেমের খেলায় অংশ নেওয়া সম্ভব হবে কি করে? এবারে আসুন একবার দেখে নেওয়া যাক। করোনা ড্যান্সের আসরে নামতে গেলে কি কি করতে হবে। না, এ আর নতুন কথা কি। গত দেড় বছরে সকলেই এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছে। নাক মুখে একটা মাক্স লাগবে। অনেকটা মুসলিম মহিলাদের বোরখা হিজাবের মতো। নাক চোখ মুখ মায় মাথা অব্দি যতটা ঢেকে ঢুকে মুড়িয়ে চলা যায়। তত মঙ্গল। না, আর সেই ছোটদের মতো ছোঁয়াছুঁই খেলা নয়। কাউকেই ছোঁয়া যাবে না। ছুঁলেই এক থেকে দশের নামতা আউড়াতে আউড়াতে হাতে সাবান ঘষতো হবে। না হলে হ্যাণ্ড স্যানিটাইজার। আর যেখানে যেখানে ভ্যাক্সিন পৌঁছিয়ে গিয়েছে। জানপ্রাণ এক করে দিয়ে এক ডোজ দুডোজ। তিন ডোজ। দরকার হলে, যখন হবে, বছরে এক ডোজ করে ভ্যাক্সিন নিতে হবে। না, শুধু নিলেই হবে না। ভ্যাক্সিনেশনের রেজিস্ট্রেশনটাই সবচেয়ে জরুরী। বাড়ি কিনেছেন গাড়ি কিনেছেন। সে’কি রেজিস্ট্রেশন না করেই? নিশ্চয় নয়। তাহলে ভ্যাক্সিন নিচ্ছেন। বছর বছর নেবেন। আর রেজিস্ট্রেশন করবেন না? তাই হয় নাকি? না করলে আপনারই কপাল পুড়বে। প্রথমে রাষ্ট্রকর্তৃক পরে সমাজিক ভাবে ব্রাত্য হয়ে যাবেন। সেই ডাইনী অপবাদে গ্রাম ছাড়ার মতোন দশা হতে পারে। না না, বিষয়টা কষ্টকল্পনা বলে হেসে উড়িয়ে দিলে হবে না। এটাই সেই নিউ নরম্যাল। ভ্যাকসিন না নিলে বিপদ। নিয়ে রেজিস্ট্রেশন না করালেও বিপদ। ভ্যাক্সিনধারী ছাড়া কেউই আর এই নতুন পৃথিবীতে এলাউড নয়। আবার সেই ভ্যাকসিনের এক্সপায়ারি ডেট ওভার হয়ে গেলেই বিপদ। তার আগেই পরবর্তী সময়ের জন্য ভ্যাকসিন ভ্যালিডিটি বাড়িয়ে নিতে হবে আপনাকে। ফোনের, নেটের রিচার্জ করিয়ে নেওয়ার মতো। ভ্যালিডিটি গন। তো আপনার স্বাধীনতাও গন। আপনার চলাফেরা বন্ধ। বাকি পৃথিবীতে আর আপনাকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। যতক্ষণ না ভ্যাকসিন রিচার্জ করিয়ে নিচ্ছেন। আর ওটাই আপনার নিউ নরম্যাল পৃথিবীতে থাকার পাসপোর্ট। নিউ নরম্যাল পৃথিবীতে ঘোরার ভিসা।
অন্তত বিগ বসের সেই রকমই বিধান। আপনার হাতের তালুতে সেই জাদুকাঠি ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। যেখানে আপনার ভ্যাকসিন ভ্যালিডিটি থেকে শুরু করে জন্মবৃত্তান্ত ঠিকুজিকুলজি ব্যাংক ব্যালেন্সের হিসেব সহ আপনার নড়াচড়া ওঠা বসা হাঁচি কাশি’র যৎযাবতীয় তথ্য ভাণ্ডার মজুত থাকবে। না আলাদা করে ভোটার কার্ড আধার কার্ড প্যান কার্ড রেশন কার্ড পাসপোর্ট ভিসা ব্যংকের পাসবই কোন কিছুই আর আপনাকে বহন করতে হবে না। রক্ষা করতে হবে না। এমনকি নগদ টাকা পয়সা? নিউ নরম্যাল পৃথিবীতে আবার নগদ? মুদ্রা ব্যবস্থাই বাতিল হয়ে যাবে। হ্যাঁ আপনার হাতের তালুতেই সব কিছু মজুত থাকবে। বিগ বসের তৈরী করা, আবিস্কার করা সেই মাইক্রোচিপ। নিউ নরম্যাল বিশ্বের জাদুকাঠি। যেটা ছাড়া মানুষের অস্তিত্ব বলেই আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। ২০২০ সালেই যে সিস্টেমের পেটেন্ট নেওয়া হয়ে গিয়েছে। সৌজন্যে সেই বিগ বস।
তো সেই নিউ নরম্যাল বিশ্বে পৌঁছাতে গেলে আপনাকেও করোনা নৃত্যে সামিল হতে হবে। হতে হবে কি। হয়েই তো রয়েছেন। হওয়ার আর বাকিই বা কি আছে? স্কুল কলেজ বন্ধ। লোকাল ট্রেন বন্ধ। কর্মসংস্থান বন্ধ। রোজগার তলানিতে। মৌলিক অধিকারগুলি প্রায় আজ রূপকথায় পরিণত। কৃষি আইন শ্রম আইন শিক্ষা আইন সবই ঢেলে সাজানো হয়ে গিয়েছে। এবার আবার আসছে নতুন বিদ্যুৎ আইন। প্রিপেড রিচার্জ ফুরিয়ে গেলেই লোডশেডিং। আবার টাকা ভরুন। আলো পান। সোজা হিসেব। না, ভর্তুকি পেতে চাইলে সেই গ্যাসের মতো ব্যবস্থা। একেবারে পাকা হিসেব। উপভোক্তার ব্যাংক একাউন্টে সরাসরি ভর্তুকির টাকা। তারপর টাকার ওজন পাতলা হতে হতে একদিন ভ্যানিশ। আর বিদ্যুতের দাম বাড়তে বাড়তে একদিন হাতে হ্যারিকেন। এই নিউ নরম্যালে পৌঁছাতেই আজকের এই করোনা নৃত্যের আসরের আয়োজন। ওরে বাবা। মহামারী আইন চালু রয়েছে। প্রতিবাদ? প্রতিরোধ? মিছিল মিটিং জমায়েত? নাগরিক জনসভা? সেসব রূপকথার গল্প। করোনা নৃত্যের আসরে সেসব নিষেধ জানেন না? করোনা নৃত্যের শুরু কি দিয়ে মনে নাই? কোয়ারেন্টিন আর সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং। হ্যাঁ শুধু একবার ছাড় পাবেন। নির্বাচনের আগে। ভোটের লাইনে না দাঁড়ালে, ধোঁকাবাজদের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি না গিললে দেশটাকে লুঠেরাদের হাতে তুলে দেবেন কি করে? তাই নির্বাচনের সময়ে করোনা নৃত্যের বিরতি। তা সবকিছুতেই তো একটা বিশ্রামের অবকাশের প্রয়োজন থাকেই। করোনা নৃত্যেও তেমনই নির্বাচনের সময় একটু বিশ্রাম নিয়ে নিন। ভোট শেষ। আপনিও তাথৈ নৃত্য জুড়ে দিন।
তো বন্ধু। আমি আপনি সকলেই এখন ড্যান্স মোডে রয়েছি। আর মুখে একটাই বুলি। আমাদের সেই ছোট্ট চার বছরের শিশুটির মতো। কামঅন বন্ধু, লেটস্ স্টার্ট করোনা ড্যান্স। ব্যাক্তি মানুষ সমষ্টি মানুষ একক মানুষ গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষ। সকলেই তাই করোনা ড্যান্সে মত্ত। সরকার, ডাক্তার, মিডিয়া আর ভ্যাকসিন এখন কেরিওগ্রাফারের ভুমিকায়। তাদের হাতের ইশারায় মুখের ভাষায় আমাদের তাল লয় কখনো দ্রুত কখনো ধীর। তালে তালে ছন্দে ছন্দে আমাদের আবহমান ছন্দ তাল লয় কেমন এক হয়ে যাচ্ছে। নানা ভাষা পরিধান সব এক তালে এক ছন্দে এক নৃত্যে সামিল। এর পরের ধাপই সেই ওয়ান ওয়ার্ল্ড ওয়ান সিস্টেম। বিগ বসের সংবিধান অনুসারে। করোনা নৃত্যই এক পৃথিবী মানুষকে একেবারে পোষ মানিয়ে সুর সুর করে সেই ওয়ান ওয়ার্ল্ড ওয়ান সিস্টেমের ভিতরে নিয়ে যাবে। না একবার ঢুকে গেলে আর মুক্তি নেই। আর মুক্তি চাইছেই বা কে? সকলেই তো আমরা নিউ নরম্যালের জাদুতে মজেছি। করোনার তালে নেচেছি। ফলে সমানেই মোক্ষ দাঁড়িয়ে রয়েছে দেখুন। ওয়াল ওয়ার্ল্ড ওয়ান সিস্টেম। যাকে নিজের হাতের তালুতে নিয়ে অপেক্ষামান বিগ বস। শুধু আমাদেরই জন্যে।
২০শে আগস্ট’ ২০২১
কপিরাইট সংরক্ষিত