উপনির্বাচন সময় মতো না হলে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে গদি ছেড়ে নেমে আসতে হবে। কিংবা সময় মতো হওয়া উপনির্বাচনেও পরাজিত হলে মুখ্যমন্ত্রীত্ব খোয়াতে হবে। না অতি বড়ো তৃণমূল বিরোধীরাও আশা করে না, উপনির্বাচন হলে সেই নির্বাচনেও পরাজিত হবেন রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যবাসীর একটা বড়ো অংশের ভোটাররা এখনো বিশ্বাস করে। নন্দীগ্রামে কোন না কোনভাবে কারচুপি করে মুখ্যমন্ত্রীকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই মামলা এখনো আদালতে বিচারাধীন। আমাদের দেশে মামলা মাত্রেই আদালতে বিচারাধীন থাকে, বা বলা ভালো ঝুলে থাকে। তার নিষ্পত্তি যে কবে হবে সে কথা কেউই আগাম বলতে পারে না। অথচ সকলেই জানে, জাস্টিস ডিলেড জাস্টিস ডিনাইড। না হলে এতদিনে নন্দীগ্রামের নির্বাচনী ফলাফল ঠিক না বেঠিক সে তথ্য আমাদের জানা হয়ে যেত। ফলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকেও এখন সেই উপনির্বাচনের উপেরই নির্ভর করতে হচ্ছে আপন মুখ্যমন্ত্রীত্বকে রক্ষা করার জন্য। ছয় মাসের ভিতরে কোন উপনির্বাচন থেকে জিতে না আসতে পারলে সংবিধান তাঁর মুখ্যমন্ত্রীত্ব স্বীকার করবে না আর। এদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণ দেখিয়ে নির্বাচন কমিশন উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা করা থেকে বিরত রয়েছে এখনো। সামনে তৃতীয় ঢেউয়ের অশনি সংকেত রয়েছে। আর এটাকেই তুরুপের তাস করে খেলতে উৎসাহী রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল। নন্দীগ্রামের প্রকাশিত নির্বাচনী ফলাফলে পরাজিত হয়েও শুধুমাত্র সংবিধানের সুযোগ নিয়ে ছয় মাস মুখ্যমন্ত্রীত্ব করে যাবে একজন, এটা অনেকেই মেনে নিতে পারেনি। এখন তাদের লক্ষ্য সম্ভবত যেনতন প্রকরেণ উপনির্বাচনটি ছয় মাসের বেশি পিছিয়ে দেওয়া। বিশেষ করে করোনার মতো এমন সুবর্ণ সুযোগ হাতের কাছে পাওয়া গিয়েছে যখন। আর সেটি করতে পারলেই মুখ্যমন্ত্রীত্ব খোয়াতে হবে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীকে। অন্তত যতদিন না তিনি পুনরায় আবার বিধানসভা উপনির্বাচন থেকে বিজয়ী হয়ে আসতে পারছেন। আর অন্তর্বতী সেই সময় পর্বে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীত্বের পদ থেকে দূরে রাখতে পারলে অনেকেরই মানসিক শান্তি।
এতো গেল, রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের সাম্ভব্য হিসেব নিকেশ। এখনো অব্দি রাজ্যে উপনির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষিত না হওয়া থেকেই যে সম্ভাবনার আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে এই পরিস্থিতির ভিতরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যখন তাঁর পাঁচ দিনের দিল্লী সফরে প্রথমেই দেশের প্রধনমন্ত্রীর সাথে দেখা করেন। তখন নানাবিধ জল্পনা কল্পনার উৎসমুখ খুলে যেত বাধ্য। রাজ্যের প্রধানের সাথে দেশের প্রধানের নিভৃত আলাপচারিতায় রাজ্যের বিধানসভা উপনির্বাচনের জট কাটানোর কোন রফাসূত্র বার হলো কিনা। সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের ছয় মাসের ভিতরে উপনির্বাচন সংগঠিত হলে। অনেকেই নিজেদের অনুমান সত্য বলে ধরে নেবে। কিন্তু তা না হলে। মুখ্যমন্ত্রীত্বের পদ হারাতে হলে সব হিসেব কিন্তু ওলোট পালোট। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর পাঁচ দিনের দিল্লী সফরের প্রথম দিনেই দেশ প্রধানের সাথে দেখা করার বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক জল্পনা চলতেই থাকেব।
আবার উল্টোদিকে দিল্লীতে শাসকদল বিরোধী বৃহত্তর রাজনৈতিক মঞ্চ গড়ে তুলতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অন্যান্য বিরোধী দলের নেতানেত্রীদের সাথে আলাপ আলাচনা করে চলেছেন। তাঁর এই পাঁচদিনের সফরের অন্যতম প্রধান কার্যক্রম স্বরূপ। আপাতদৃষ্টিতে কেন্দ্রের সরকার বিরোধী প্রধান মুখ হয়ে ওঠার দৌড়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রায় অনেকটাই এগিয়ে এইমুহুর্তে। সদ্য সদ্য রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে কেন্দ্রের শাসকদলকে প্রতিহত করে দিয়ে ভারতব্যাপী তাঁর জনপ্রিয়তা কিছুটা পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে বইকি। সেই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে চাইছেন অনেকেই। এখন করোনার দোহাই দিয়ে উপনির্বাচন সময় মতো না করলে। মুখ্যমন্ত্রীত্ব হারালেও তাঁর রাজনৈতিক জনপ্রিয়তায় কোন ঘাটতি পরবে না। বরং বৃদ্ধি পাবে। অনেকেই করোনার অজুহাতে উপনির্বাচন না করানোকে রাজনৈতিক প্রতিশোধ বলে ধরে নিতে চাইবেন। সেইক্ষেত্রে কেন্দ্রের বর্তমান শাসকদল বিরোধী রাজনীতিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থায় পৌঁছিয়ে যাওয়ার সুযোগও পেয়ে যেতে পারেন। যদি না সারা ভারতে বাংলার নেতৃত্বের প্রতি বাকি ভারতের কোন এলার্জি থাকে।
ফলে প্রধানমন্ত্রীর সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে আলোচনা যাই হোক না কেন। এই মুহুর্তে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সময় ভালোই যাচ্ছে। দেশজুড়ে তাঁকে নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতেও আলাপাআলোচনার একটা বৃহত্তর বৃত্ত গড়ে উঠেছে। এখন দেখার, রাজ্যে আপন মুখ্যমন্ত্রীত্ব রক্ষা করাই তাঁর কাছে বেশি জরুরী হয়ে দেখা দিয়েছে, নাকি দেশের এমন এক সংকটকালে পদ্মশিবির বিরোধী গণআন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ হয়ে ওঠার সুযোগটাই তাঁর কাছে প্রধানতর লক্ষ্য এখন?
২৯শে জুলাই’ ২০২১
কপিরাইট সংরক্ষি