দেবাঞ্জন কেমন আছে? তার পেট থেকে কি কথা বার করা গিয়েছে? পাওয়া গিয়েছে সেই মূল্যবান নামগুলি? যারা কলকাতা কর্পোরেশনের ভেতরে থেকে তাকে নিরন্তর সাহায্য করে যেতো? তার জালিয়াতির সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে। ভুয়ো আইপিএস আইএএস। ভুয়ো সিবিআই আধিকারিক। ভুয়ো উকিল। অনেকেই চেষ্টা করলে হতে পারে। কিন্তু কলকাতা কর্পোরেশনের নামে আস্ত একটা ভুয়ো অফিস যে কেউ খুলে ফেলতে পারে না। পারে না, সেই অফিসে ভুয়ো নিয়োগপত্রের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ করতে। পারে না, ব্যাংকে কলকাতা কর্পোরেশনের আধিকারিকের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়ো একাউন্ট খুলে ফেলতে। এই কাজগুলি জাদুকর ম্যানড্রেক ছাড়া আর কারুর পক্ষে করে দেখানো সম্ভব হতো না। যদি না কলকাতা কর্পোরেশনের ভিতর থেকে দেবাঞ্জনকে সাহায্য করে যাওয়া হতো। সেই কর্পোরেশনের নামে ভুয়ো ভ্যাক্সিন শিবিরের আয়োজন করতেও ভিতরের লোক লাগে। না, এই ণত্ব ষত্ব গুলি জানতে খুব বেশি আইকিউয়ের প্রয়োজন নাই। একেবারেই সাধারণ জ্ঞানের উপরে নির্ভর করে এই বিষয়গুলি অনুমান করা যায়। এখন অনুমান যে কেউ করতে পারে। কিন্তু প্রমাণ করার ভার নির্দিষ্ট দপ্তরের। বা দপ্তরগুলির। যাদের নাকের ডগার উপরে এই জালিয়াতির কর্মকাণ্ড রমরমিয়ে চলছিল দিনের পর দিন। এটা নিশ্চিত। তারা নাকে সর্ষের তেল দিয়ে দিবা নিদ্রা না দিতে থাকলে। এই কর্মকাণ্ডও দিনের পর দিন চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। কলকাতাবাসীর সৌভাগ্য স্থানীয় সাংসদের তৎপরতায় বিষয়টি দিনের আলোয় প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু তবুও দেরি হয়ে গিয়েছে অনেক।
কিন্তু দেরি হোক আর নাই হোক। এখনো সর্ষের ভিতরেই যে ভুতেরা বহাল তবিয়েতে গোঁফে তা দিয়ে চলেছেন, তাদের পরিচিতি যতদিন না উন্মোচিত হচ্ছে সম্পূর্ণ রূপে। ততদিন কলকাতাবাসীর বিপদ কিন্তু কাটছে না। যাঁরা ভাবছেন, দেবাঞ্জন ধরা পড়ে গিয়েছে। মস্ত বড়ো ফাঁড়া কেটে গিয়েছে। দেবাঞ্জনের শাস্তি হলেই সবকিচু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। দুঃখিত, তাঁরা স্বকল্পিত স্বর্গরাজ্যে বাস করছেন। না, আমাদের রাজ্যের ভিতরে যে সব নারকীয় ঘটনা ঘটে চলেছে। সেই বিষয়ে যাঁদের বিন্দুমাত্র ধারণা কিংবা অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাঁরা জানেন দেবাঞ্জনের শাস্তিতে এই অপরাধের কোন নিস্পত্তি হবে না। হতে পারে না। ঠিক যেমন সুদীপ্ত সেনকে বছরের পর বছর জেলবন্দী করে রেখেও সারদা কেলেঙ্কারির কোন নিস্পত্তি ঘটে নি। সারদা কেলেঙ্কারির অন্যান্য সব কুশীলবেরা দিব্যি গায়ে হাওয়া লাগিয়ে মা মাটি মানুষের কষ্টার্জিত পয়সায় ফূর্তি করে চলেছেন। মা মাটি মানুষের নামে শপথ নিয়ে মা মাটি মানুষকেই সর্বস্বান্ত করেও তাদের না হয়েছে আত্মগ্লানি। না রয়েছে লজ্জা। সর্ষের ভিতর থেকে সব ভুত বার করতে না পারলে কোন কেলেঙ্কারিরই কোন নিশ্পত্তি হওয়া সম্ভব নয়। নিত্য নতুন রূপে একের পর এক কেলেঙ্কারির জন্ম হতে থাকে শুধু। দেবাঞ্জনের সৌজন্যে ভুয়ো ভ্যাক্সিনকাণ্ড সেই রকমেরই একটি ঘটনা।
এই ধরণের জালিয়াতিগুলি কখনোই ক্ষমতার যোগসাজশ ছাড়া চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সারদা কেলেঙ্কারিও মস্ত বড়ো এক জালিয়াতি। সেও দিনে দিনে হজম করে নেওয়ার দিব্য চেষ্টা চলছে। এক সুদীপ্ত সেনকে দিয়েই সেই কেলেঙ্কারি ঢাকা দেওয়ার কাজ এগিয়ে চলছে ধীরে ধীরে। দেবাঞ্জনকে দিয়েও কি ঠিক একই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে? আসল প্রশ্ন কিন্তু সেখানেই। যদিও কথায় বলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকা দেওয়া যায় না। কিন্তু রাজনীতি আর ভোটতন্ত্র এমনই এক শক্তিশালী অক্ষ যে, বহু অসম্ভবই সম্ভব করে তাক লাগিয়ে দেওয়া যায়। আর মানুষ? অর্থাৎ জনগণ? শিশুকে যেমন একের পরে এক খেলনা দিয়ে আর জুজুর ভয় দেখিয়ে এক বিষয় থেকে অন্য বিষয়ে নজর ঘুরিয়ে দিয়ে ভুলিয়ে রাখা যায়, জনগণকেও ঠিক একই ভাবে একের পর এক ইস্যু দিয়ে বুঁদ করে রেখে ম্যানেজ করে নেওয়া যায়। ভারতবর্ষের রাজনীতিতে এই খেলাটা নতুন নয়। বরং ভারতীয় গণতন্ত্র যে ভিতের উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেই ভিত গড়াই হয়েছে এই খেলার উপরে নির্ভর করে। ফলে দেবাঞ্জনের চোরাবালিতে ভুয়ো ভ্যাক্সিনকাণ্ডও আটকিয়ে থাকলে। মোটেও অবাক হওয়ার কিছুই নেই। জনগণকে ম্যানেজ করতে সুদীপ্ত সেন দেবাঞ্জনেরাই তুরুপের তাস। যখন যেভাবে যেখানে প্রয়োজন। শুধু সময় মতো খেলে দিতে পারলেই হলো। বাকিটা ভোটের হিসেবে বুঝে নেওয়া যাবে। মানুষের রায়ে সরকার টিকে থাকলে আইন আদালত খুব বেশি ট্যাঁফুঁ করার মতোন অবস্থায় থাকে কি?
২৬শে জুলাই’ ২০২১
কপিরাইট সংরক্ষিত