সত্যিই সুন্দরী মহিলাদের দিকে চেয়ে থাকতে কার না ভালো লাগে? যদি সে উঠতি বয়সের তরুণ যুবা হয়। কিন্তু শুধু কি ভরা যৌবনেই সুন্দরী মহিলাদের প্রতি এমন আসক্তির জন্ম হয়? মধ্যবয়সী টাক মাথা ভুঁড়িয়াল দাঁত পড়া পুরুষও কম যায় না। সেই অভিজ্ঞতা সুন্দরী মহিলা মাত্রেরই রয়েছে। পথে ঘাটে বাসে ট্রামে কামাসক্ত দৃষ্টির পুরুষের কোন অভাব নাই। শুধু সুন্দরী মহিলা কেন, মহিলা মাত্রেই পুরুষের দৃষ্টির বেড়াজালে আটকিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়েই মেয়েদের জীবন অতিবাহিত হয়। সেটাকে মানিয়ে নিয়ে চলতে চলতে সেটাই কি একটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে যায় না? যেদিন কোন পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণের আর কোন ক্ষমতা থাকে না। সেই দিনটি কি মেয়েদের জীবনে খুব স্বস্তির? নিশ্চয় নয়। আসলে এ প্রকৃতির খেলা। প্রকৃতি আমাদের এমন এক কামাগ্নিতে বেঁধে রেখে দিয়েছে। তার থেকে কেই বা মুক্তি পায়? হিরো মার্কা চেহারা নিয়ে যে যুবকরা ঘুরে বেড়ায়। কিংবা সাহেবসুবো ধনকুবের কন্দর্পকান্তি পুরুষ। তাঁদের দিকে চেয়ে থাকতে যৌবনবতী থেকে বিগতযৌবনাদের আগ্রহও কি কম কিছু? আসলে এই হলো জগতের নিয়ম। সকলেই যে সকলের প্রেমে পড়ছে তাও তো নয়। কিন্তু বিপরীত লিঙ্গের মানুষটির প্রতি একটা অতিরিক্ত টান রক্তের ভিতরেই খেলা করতে থাকে। বলা ভালো যতদিন করতে থাকে। ততদিনই যৌবন। ততদিনই এই বিশ্ব প্রকৃতির সাথে আমাদের নিবিড় সংযোগ। সেই সংযোগ আলগা হতে শুরু করাই আসলে বার্ধক্য। এইভাবেই যদি ভাবা যায়, তবে সুন্দরী মহিলাদের দিকে কিংবা কন্দর্পকান্তি পুরুষের দিকে চেয়ে থাকা খুব একটা অনভিপ্রেত বিষয় নয় হয়তো। কারণ এটাই জীবনের ধর্ম। যৌবনের সিম্পটম।
ফেসবুক ইস্টাগ্রাম টুইটার ইত্যাদির মতো সোশ্যাল সাইট এসে এই বিষয়টিকে অন্য একটি মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে। একজন সুন্দরী মহিলা যখন পথে বার হন। তিনি কখনোই নিজের রূপ যৌবন সৌন্দর্য্যের প্রদর্শন করতে বাইরে বার হন না নিশ্চয়। বাইরে বেরোন নির্দিষ্ট কোন কাজে। কিন্তু একজন সুন্দরী মহিলা যখন ফেসবুক ইস্টাগ্রামে নিজের ছবি পোস্ট করেন এবেলা ওবেলা। তখন সেই পোস্ট করার পিছনে যদি নিজেকে দেখানোর অভীপ্সা থাকে তবে বলার কিছু নাই। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষ সমবেত হয় প্রধানত নিজেকে জাহির করতেই। বহুজনের সাথে সংযোগের বিষয়টি যতই সামনে থাকুক। বহুজনের কাছে নিজেকে তুলে ধরার বিষয়টিই হলো মূল উদ্দেশ্য। সেই লক্ষ্যেই একজন নিজের লেখা পোস্ট করেন। কেউ নিজের গাওয়া গান পোস্ট করেন। কেউ নিজের মতামত প্রকাশ করেন ইত্যাদি ইত্যাদি। ঠিক তেমনই বহু মহিলাকেই দেখা যায় এবেলা ওবেলা নিজের প্রোফাইল ছবি পোস্ট করতে। নানান সাজে নানান ভঙ্গিমায়। আর অধিকাংশ পুরুষদের দেখা যায় দিনভর সেই সব পোস্টে লাইক কমেন্ট করে যেতে অক্লান্ত ভাবে। বহু মহিলা আবার নিজের লেখা কবিতা গল্প প্রবন্ধ অভিমত প্রকাশের আছিলায় নিজের কোন বিশেষ মুহুর্তের সাজানো গোছানো মুখচ্ছবিটিও প্রকাশ করে দেন সেই সাথে। এবং সাথে সাথে বহু পুরুষের কলধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে পোস্টদাত্রীর টাইমলাইন। এই সেই পুরুষের দল। যারা পথেঘাটে সুন্দীর মহিলা দেখলেই একমনে চেয়ে থাকতে ভালোবাসেন। কিন্তু পথেঘাটে সুন্দরী মহিলাদের দিকে চেয়ে থাকা যতই অশোভন মনে হোক। নিজের স্মার্টফোনে কিংবা ল্যাপটপে সুন্দরী মহিলার ছবিতে লাইক কমেন্ট করাকে কেউই অশোভন ভাবেন না। যিনি করছেন এবং যাঁর ছবিতে করা হচ্ছে। এইখানেই এইসকল সোশ্যাল মিডিয়াগুলি আমাদের মতো বদ্ধ একটা সমাজে একটা হাঁপ ছেড়ে বাঁচার পরিসর খুলে দিয়েছে। যিনি ফেসবুকে ঢুকে, ইনস্টাগ্রামের একাউন্টে লগইন করে নিমগ্ন হয়ে সুন্দরী মহিলাদের ছবি ঘেঁটে চলেছেন, তিনিও হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছেন পথঘাটে সুন্দরী মহিলাদের দিকে চেয়ে থাকার দায় থেকে। আবার যিনি তাঁর এই বেলার সাজ দেখাতে ফেসবুক আপন ছবি পোস্ট করে লাইক কমেন্ট গুনে চলেছেন, তিনিও হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন বহু জোড়া চোখের দৃষ্টির ভিতরে থাকার অস্বস্তি থেকে। কিন্তু তার সাথে আরও একটি উপরি পাওয়া রয়েছে। দুইবেলা নিজের সৌন্দর্য্যকে বহুজনের সামনে তুলে ধরার নার্সিসাস আনন্দ! যিনি মহিলাদের সুন্দরী মুখের ছবি, দেহশ্রীর ছবি ঘেঁটে চলেছেন সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে, তিনিও আরও এক আনন্দ পাচ্ছেন। অবাধে সুন্দরী মহিলাদের ছবি দেখে যাওয়ার আনন্দ। পথেঘাটে এমন খোলামেলা ভাবে এমন পরিতৃপ্তির সাথে এই দেখা ও দেখানোর তৃপ্তি পাওয়ার উপায় থাকে না। কিন্তু দেখা ও দেখানোর একটা অবদমিত বাসনা রয়ে যায়। সকলের চোখে সুন্দরী বলে প্রতিভাত হওয়ার বাসনা। সুন্দরী মহিলার দর্শনে পুলিকত হয়ে ওঠার বাসনা। সেই বাসনা নারী ও পুরুষের অস্থিমজ্জায় রয়ে যায়। চিরকাল। এখানেই প্রকৃতি নারী ও পুরুষকে বেঁধে রেখেছে পরস্পরের সাথে। সেই বাঁধন এমনই অমোঘ। সেই অমোঘ বাঁধন সোশ্যাল মিডিয়ায়গুলিতে এসে সত্যিই হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছে। নো চিন্তা ডু ফূর্তি। কেউ দোষ দেবে না। অথচ পুরো আনন্দটুকু উপভোগ করা যাবে।
২৪শে জুলাই’ ২০২১
কপিরাইট সংরক্ষিত