লোকসভা রাজ্যসভায় হইচই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ইস্তফা দিতে হবে। ভাগ্য ভালো ইস্তফার দাবির তালিকায় প্রধানমন্ত্রীর নাম নেই। সরকার, বিরোধীমত স্তব্ধ করতে গণতন্ত্রের সব রকমের রক্ষাকবচকে নিজ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মোবাইল ফোনে আড়ি পাতবে, এতো জানাই কথা। হ্যাঁ সেই আড়ি পাতার জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সরকারের হাতে নাই। নাই বলেই সেই গুপ্তচর প্রযুক্তি আমদানী করতে হয়েছে বিদেশী শক্তির কাছে থেকে। তাও আবার যে সে বিদেশী শক্তি নয়। একেবারে বিশ্বসন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র ইজরায়েলের কাছ থেকেই। তা হোক। এমন অত্যাধুনিক ডিজিটাল গুপ্তচর প্রযুক্তি ইজরায়েল ছাড়া আর কোন দেশ আবিষ্কার করবে? আর ডিজিটাল ইণ্ডিয়ার রূপকার সেই ডিজিটাল প্রযুক্তির আমদানী করবে না? তাই আবার হয় নাকি? অবশ্যই করবে। ডিজিটাল ইণ্ডিয়া গড়তে এই প্রযুক্তিই তো সব থেকে বড়ো বল ভরসা। ফলে সরকার বিরোধী চিন্তাধারা কোথায় কি চর্চা চলছে, সেসব জানা সরকারের প্রাথমিক দায়িত্ব। সেই কর্তব্যকর্মে সরকার যে অবিচল এবং অষ্টপ্রহর সজাগ। সে বিষয়ে আর বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই। দেশের স্বঘোষিত চৌকিদার যে ফাঁকা আওয়াজ দিয়েছিলেন না। সেকথা আবারো প্রমাণিত হল। দেশের সম্পদ জনতার হাত থেকে নিয়ে দুই একজন বন্ধু কর্পোরেট শিবিরের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়েও তিনি যেমন অক্লান্ত চৌকিদারী চালিয়ে যাচ্ছেন। তার সরকারের বিরুদ্ধে সরব হওয়া গণতান্ত্রিক কন্ঠস্বরেরা কোথায় কার সাথে কখন কি শলাপরামর্শ করছে। সেকথা সরাসরি জানতেও সেই চৌকিদারীও যে চলবে অক্লান্ত উদ্যোগে, এ আর নতুন কথা কি? ফলে এই চৌকাদারী রাজত্বে চৌকাদারী নিয়েই সমালোচনার তো কোন মানেই হয় না। এখন যদি কেউ প্রশ্ন তোলে জল কেন নীচের দিকে গড়ায়? সূর্য কেন পূর্ব দিকে ওঠে। চোর কেন চুরি করে। মিথ্যেবাদী কেন মিথ্যে কথা বলে। তবে সেই সেই ঘটনার সমালোচনা করার তো কোন অর্থ হয় না। যার যেটা ধর্ম ও প্রকৃতি। সে তো সেটাই করবে। কথায় বলে নিয়তির বিধান খণ্ডাবে কে?
ফলে জনগণ যে সরকারকে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় নির্বাচিত করেছে। সেই সরকার তো তার মতো করেই শাসনকর্ম পরিচালনা করবে। তাই নিয়েও সমালোচনা? আর সমালোচনা যদি করতেই হয়। তবে সরকারকে কেন? জনতাকে কেন নয়? জনতা কি জানতো না গুজরাটের কি ট্র্যাক রেকর্ড? গুজরাট মডেলের শাসনের কথা জনতার তো আর অজানা ছিল না। জনতাই যখন সেই গুজরাট মডেলকে সারা ভারতে ইনস্টল করেছে। তখন জবাবদিহি চাইতে হলে জনতার কাছেই চাওয়া উচিত নয় কি? ফোনে আড়িপাতা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে ভোট ভাগ করে ক্ষমতায় থাকার ফর্মূলা। সরকারী সম্পদের মালিকানা গোষ্ঠীস্বার্থে ভাগাভাগি করে নেওয়া। এই সব নিয়েই তো সেই বিখ্যাত গুজরাট মডেল। জনগণকে সবসময়ে নানান রকমের লাইনে দাঁড় করিয়ে রেখে ব্যাস্ত করে রাখার কৌশলে বিরোধী জনমতকে দানা বাঁধতে না দেওয়ার ফর্মূলা। জনতার কাছে অজানা ছিল কি? তবু তো জনগণ সেই মডেলকেই একবার নয়। দু দুবার বিপুল জনসমর্থনে ক্ষমতায় নির্বাচিত করেছে। ফলে সরকারকে তার নিজের স্বার্থে চলার লাইসেন্স সেই জনতাই তো দিয়েছে। এখন সরকার তার নিজ গোষ্ঠীস্বার্থে যা যা করণীয়। তাই তাই করছে, করবে। তার বাইরে তো সরকার পা রাখে নি। ফলে সরকারের সমালোচনা করার আগে দুইবার ভাবা দরকার। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ফোনে আড়িপাতার অর্থ কি? অর্থ তাদেরকেই সম্মান জানানো। সরকার তো আর আমার আপনার মতো ভোটের লাইনে দাঁড়ানো হেঁজিপেঁজি রাম শ্যাম মধু’র মোবাইলে ইজরায়েলের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা অর্থ ব্যয় করে কেনা পেগাসাস ভাইরাস ঢুকিয়ে দিয়ে আড়ি পাততে বসে যাবে না। সরকার সেই সেই ব্যক্তির ফোনেই আড়ি পাতবে। যাদের কাজকর্মের উপরে চব্বিশঘন্টা নজরদারী চালানোর দরকার আছে। কি কি শলাপরামর্শ করছেন তারা। সে সব আগে ভাগে না জানলে সরকার তাদের নিয়ন্ত্রীত করবে কি করে? ফলে সরকার ঠিক সেই সেই কাজই করছে, যে যে কাজ করার উদ্দেশ্য নিয়েই তারা সরকারী ক্ষমতা দখল করেছে। জনতার ইচ্ছেয়। দেষের ভাগী যদি কেউ হয়। তা সে ভারতীয় জনতা। যাঁরা ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে গুজরাট মডেলকে ইনস্টল করেছে সারা ভারতে।
২০শে জুলাই’ ২০২১
কপিরাইট সংরক্ষিত