ভ্যাক্সিনের প্রসঙ্গ উঠলেই এখন রাজ্যবাসীর চোখে দেবাঞ্জন দেবের মুখাবয়ব ভেসে উঠছে। ভ্যাক্সিনের ভায়ালের ছবি দেখলেই জাল ভ্যাক্সিনের বিভীষিকা মনের ভিতর জুড়ে বসছে। আসল ভ্যাক্সিন না নকল ভ্যাক্সিন এই নিয়ে রাজ্যবাসী খুবই সন্ত্রস্ত এখন। আর অপর দিকে করোনার দ্বিতীয় ওয়েভের ভারতব্যাপী সাফল্যে, মানুষ প্রায় নাওয়া খাওয়া ভুলে ভ্যাক্সিনের পিছনে ছুটছে। সরকারী হাসপাতাল থেকে যাঁরা ভ্যাক্সিন নিচ্ছেন তাঁরা বরং নিশ্চিন্ত। যাক এবারে করোনার হাত থেকে রেহাই পাওয়া গেল ভেবে। শরীরে সরকারের সরবরাহ করা আসল ভ্যাক্সিন ঢুকে গেলেই মানুষের মনবল বেড়ে যাচ্ছে। এগুলি খুবই আশার কথা। এবং কথায় বলে আশায় বাঁচে চাষা। এবারে কয়েকটি তথ্যের দিকে আলোকপাতা করা যাক। ভারতে এখন অব্দি মূলত দুইটি ভ্যাক্সিন ব্যবহার করে প্রায় বত্রিশ কোটির মতো মানুষের টীকাকরণ করা হয়েছে। সেই ভ্যাক্সিন দুইটি হলো, সিরাম ইনস্টিটিউটের কোভিশীল্ড। আর ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন। প্রথমটি ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানিজেশন কর্তৃত স্বীকৃত। কিন্তু দ্বিতীয়টির স্বীকৃতি জোটে নি এখনো। আরও খবরে প্রকাশ, ব্রাজিলে এই কোভ্যাক্সিনের বরাত নিয়ে সেই দেশের সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে। যদিও আমাদের আলোচনা সেই বিষয় নিয়ে নয়। আজকের খবর। ইউরোপীয়ন ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলিতে কোভিশীল্ড নেওয়া ভারতীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়েছে। অর্থাৎ কোভিশীল্ড নেওয়া ভারতীয়রা ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোন দেশে প্রবেশের গ্রীনপাস ভিসা পাবেন না। অন্যদিকে কোভ্যাক্সিন নেওয়া ভারতীয়রা হু অনুমোদিত ভ্যাক্সিন না নেওয়ায়, বিশ্বের অধিকাংশ দেশেরই ভিসা পাবেন না। এখন আপনি ভাবুন। যে কোভিশীল্ড কিংবা কোভ্যাক্সিনের আসল ডোজ সরকারী হাসপাতাল বা সরকার অনুমোদিত নাম করা বেসরকারী হাসপাতাল থেকে আপনি শরীরে ঢুকিয়ে করোনা থেকে নিজেকে সুরক্ষিত মনে করে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে যাচ্ছেন। সেই ভ্যাক্সিন ইউরোপ আমেরিকার উন্নত দেশগুলিতেই স্বীকৃতি লাভে ব্যার্থ এখনো। না, আপনি আমি হয়তো এখনই বিদেশ পারি দিচ্ছি না। আমাদের এই মুহুর্তে কোন দেশের ভিসা জোগারের প্রয়োজনীয়তা নেই হয়তো। কিন্তু এই সংবাদ জানার পরে আমাদের মনের ভিতরে সরকারী টীকাকরণ কেন্দ্র থেকে নেওয়া ভ্যাক্সিনের উপরে কতটা নিশ্চয়তা থাকতে পারে? আমরা যারা দেবাঞ্জন দেবের ভ্যাক্সিন শিবির থেকে ভ্যাক্সিন নিই নি? আমরা যারা আসল ভ্যাক্সিন নেওয়ার আনন্দে কাল অব্দিও মশগুল ছিলাম।
তাহলে আমরা যে আসল ভ্যাক্সিন নিয়ে বসে রয়েছি। সেই আসল ভ্যাক্সিনই ইউরোপ আমেরিকা সহ উন্নত দেশগুলিতে স্বীকৃত নয়। কারণ কি? কারণ তো মূলত একটিই হতে পারে। এই দুইটি ভ্যাক্সিন বিষয়ে বিশ্বের উন্নত দেশগুলি এখনো সন্দিহান। না, এই দুই ভ্যাক্সিন কিন্তু শ্রী দেবাঞ্জন দেব কর্তৃক প্রস্তুত নয়। প্রস্তুত ভারতবর্ষেরই সেরা দুইটি ভ্যাক্সিন প্রস্তুতকারক সংস্থা কর্তৃক। আমাদের দেশের সরকার তাল ঠুকে বলছেন, ভ্যাক্সিনের ডোজ দেওয়ায় ভারত ইতিমধ্যেই আমেরিকা সহ উন্নত বিশ্বের অধিকাংশ দেশকেই সংখ্যাতত্বের বিচারে পিছনে ফেলে দিয়েছে। এদিকে সেই ভ্যাক্সিন নেওয়া ভারতীয়দেরই উন্নত বিশ্বে প্রবেশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বিশেষ এই দুইটি সংস্থা কর্তৃক প্রস্তুত ভ্যাক্সিন। অর্থাৎ যে আসল ভ্যক্সিন নেওয়ার আনন্দে আমরা মশগুল ছিলাম এতদিন। সেই আসল ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা সম্বন্ধেই রয়ে গিয়েছে অনেক প্রশ্ন। দুটি সংস্থা থেকেই বলা হচ্ছে তাদের প্রস্তুত ভ্যাক্সিন অচিরেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র পেয়ে যাবে। অর্থাৎ তখন আর এই ভ্যাক্সিন নেওয়া ভারতীয়দের বিদেশ যেতে অসুবিধা হবে না। খুব ভালো কথা। কিন্তু যদি এমন হয়। ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানিজেশন থেকে দাবি করা হল। কোভ্যাক্সিন প্রশ্নের উর্ধে নয়। কোভ্যাক্সিনের ছাড়পত্র তখনই মিলবে যখন আরও উন্নত মানের সঠিক কার্যকারিতার ভ্যাক্সিন প্রস্তুত করতে পারবে সংস্থাটি। হু’র বিভিন্ন প্যারামিটার অনুযায়ী। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকেও যদি কোভিশীল্ড সম্বন্ধে একই বিধান দেওয়া হয়। কি করবেন আপনি? কি করা উচিত হবে আমাদের? না, আমরা যাঁরা বিদেশ ভ্রমণে যাবো না। যাঁরা যাবেন। তাঁরা কি করবেন। সে তাঁরাই ঠিক করবেন। কিন্তু যে কোটি কোটি মানুষ কোনদিন বিদেশে যাবে না। কিন্তু ইতিমধ্যেই কোভিশীল্ড ও কোভ্যাক্সিনের একটি বা দুটি ডোজ নিয়ে বসে রয়েছেন? কি হবে তাঁদের? কি সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্র সরকার? ধরা যাক সিররাম ইনস্টিটিউট এবং ভারত বায়টেক সংস্থা দুটিই পরবর্তীতে উন্নততর কোভিশীল্ড কোভ্যাক্সিন প্রস্তুত করে ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানিজেশন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভ্যাক্সিন ছাড়পত্রও লাভ করলো। তখন? তখন কি সরকার আমাদের আবার নতুন করে সেই উন্নততর ভ্যাক্সিন নিতে বাধ্য করবে? নাকি আমরাই নিজে থেকে আমাদেরকেও সেই উন্নততর ভ্যাক্সিন দেওয়ার দাবিতে পথে নামবো। সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার অধিকার কিন্তু ধনী নির্ধন সকলের। যাদের পাসপোর্ট রয়েছে। আর যাদের তা নাই, সকলের।
না, ফলে জালিয়াত দেবাঞ্জন দেবের ভুয়ো ভ্যাক্সিন শিবির থেকে আপনি আমি ভ্যাক্সিন নিই নি বলেই আমাদের নিশ্চিন্তে ঘুম দেওয়ার সুযোগ নাই আর। আমরা ইতিমধ্যেই যে ভ্যাক্সিন নিয়ে বসে রয়েছি। সেই ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে অনেক। সেই সকল প্রশ্নের কোন সদুত্তর হাতে না থাকা সত্তেও আমাদের সরকার সেই সন্দেহভজন ভ্যক্সিন দিয়েই আমাদেরকে নিশ্চিন্তে রাখার ব্যবস্থা করেছে। তাদের করোনা টীকাকরণ প্রকল্পে। এত এত কোটি কোটি ভারতীয়ের জীবন নিয়ে এতবড়ো ঝুঁকি নেওয়ার আগে, আরও বেশি করে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া উচিৎ ছিল না কি? কি ভাবছেন আপনি? এই মুহুর্তে দাঁড়িয়ে? ভ্যাক্সিন গ্রহণের সরকারী সার্টিফিকেট হাতের মুঠিতে ধরে?
২৯শে জুন’ ২০২১
কপিরাইট সংরক্ষিত