কলকাতাবাসী বেশ কিছুদিন ভাগাড়ের মাংস খেয়ে দিব্যি হজম করে ফেলেছিল। ভাগাড়ের মাংসের বিশাল নেটওয়ার্কের আওতায় থাকা কলকাতাবাসীকে সেই মাংস অন্তত যমালয়ে পাঠাতে পারেনি। কলকাতাবাসীর সহ্যশক্তির তুলনা নাই। ভাগাড়ের মাংস যারা হজম করতে পারে, তাদের জাল ভ্যাক্সিনে আর কতটা ক্ষতি করতে পারবে? বিশেষ করে যদি তা শুধুই জলে ভরা হয়ে থাকে। তাই কলকাতাবাসীর স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা ততটা উদ্বিগ্ন নই। যতটা জালিয়াতির রকম নিয়ে। জাল পরিচয়ে মানুষের কাছ থেকে অর্থ ছিনিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্য ছাড়াও যে জালিয়াতির কর্মকাণ্ড বিস্তৃত হতে পারে, সেটা জেনে নগরবাসীর চোখ কপালে উঠে গিয়েছে। আমাদের প্রশ্ন সেই জালিয়াতি কর্মকাণ্ডে আপাতত ধৃত ব্যক্তিটিকে নিয়েও নয়। আমাদোর প্রশ্ন ভ্যাকসিন জালিয়াতির এই বিশাল কর্মকাণ্ডে কোভিশীল্ডের লেবেল লাগানো যে জাল ভায়ালগুলি হাজারে হাজারে ব্যবহৃত হয়েছিল। সেই জাল ভায়ালগুলি কাদের হাতে তৈরী হচ্ছিল? কোন উদ্দেশে? জাল কোভিশীল্ডের এই কারবার নিশ্চয় একজন দেবাঞ্জন দেবের কাছে বিক্রীর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রস্তুত হতে পারে না। আবার যেহেতু খোলা বাজারেও কোভিশীল্ড বা কোভ্যাক্সিন পাওয়া যাবে না। ফলে খোলা বাজারে জাল ওষুধের বাণিজ্য করার জন্যেও এই কারবার নয় নিশ্চয়। তাহলে যে প্রশ্নটা হাতে পড়ে থাকে সেটা বেশ মারাত্মক। সরকারের বিলি করা কোভিশীল্ডের ভিতরেও এই জাল কোভিশীল্ড ঢুকে নেই তো? যাঁরা ভ্যাক্সিনের লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পর এক ডোজ ভ্যাকসিন নিয়ে আনন্দের সেল্ফি তুলে বাড়ি ফিরছেন। করোনাকে জব্দ করার হাতিয়ার হাতে এসে গেছে মনে করে। তাঁরা কিন্তু কেউই ভ্যাক্সিন নেওয়ার আগে ভায়ালের ণত্ব ষত্ব পরীক্ষা করে দেখে নিতে পারছেন না। জাল ভ্যাক্সিন ঢুকলো না আসল ভ্যাকসিন ঢুকলো। সরকারী হাসপাতালই হোক। আর বেসরকারী হাসপাতালই হোক। স্বেচ্ছাসেবী ভ্যাক্সিন ক্যাম্পই হোক। মানুষের পক্ষে কোনভাবেই ভ্যাক্সিনের শিশির লেবেল দেখে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই। যে সেই ভ্যাকসিন আসল না নকল। সবটাই কপাল ঠুকে বিশ্বাসের উপরে ভরসা করে বসে থাকা।
একশ আটত্রিশ কোটি মানুষের দেশে। ভারতবর্ষের মতো রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের সমাজে। এবং আপাদমস্তক দূর্নীতিতে ডুবে থাকা একটি রাষ্ট্রে ভ্যাক্সিন নিয়ে কোন দূর্নীতি হবে না, এমনটা মনে করা আর মূর্খের স্বর্গে বাস করা এক বিষয়। যেহেতু ভ্যাক্সিন এখনো খোলা বাজারে এসে পৌঁছায় নি। সবটাই সরকার নিয়ন্ত্রীত। যে বেসরকারী হাসপাতালগুলি ভ্যাক্সিন দিচ্ছে। তারাও সরাসরি প্রস্তুতকারী দুইটি সংস্থা থেকেই কিনে নিচ্ছে। ফলে মানুষের মনে বদ্ধমূল ধারণা তৈরী হয়ে গিয়েছিল। এই ভ্যাক্সিন নেওয়া যায় নিশ্চিন্তে। অন্তত জাল ভ্যাক্সিনের খপ্পরে পড়তে হবে না। কিন্তু সবচেয়ে বড়ো প্রশ্ন এখন একটাই। যত জন মানুষ এই বছরে আজ অব্দি ভ্যাক্সিন নিয়েছেন। তাঁদের কত শতাংশ সত্যিই আসল ভ্যাক্সিন পেয়েছেন। আর কত শতাংশের শরীরে এই রকম নকল কোভিশীল্ড কিংবা কোভ্যাক্সিন ঢুকে বসে রয়েছে? চোখবুঁজে বলে দেওয়া যায়। এর কোন সঠিক উত্তর এই দেশে কেউ দিতে পারবে না। এবং দেওয়ার চেষ্টা করাও হবে না। আমাদের দেশে সরকার এবং সরকারের পরিচালক নির্বাচিত শাসক দল। কারুরই জনতার দরবারে কোন জবাবদিহির দায় থাকে না। ক্রমাগত বিরোধী দলের মুণ্ডুপাত করে ভোটাররূপী জনতার কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বজায় রাখা ছাড়া আর কোন দায়িত্ব বহনের দায় তাদের কারুরই নেই। ফলে কারা কি পরিমাণে দেশ জুড়ে এই নকল কোভিশীল্ড কিংবা কোভ্যাক্সিন বা স্পুটনিক তৈরী করে চলেছে। তাদের এই নকল ভ্যাক্সিন তৈরীর জালিয়াতির ব্যবসায় কোন কোন ব্যক্তি বা সংস্থা অর্থলগ্নী করেছে। এই সকল তথ্য জনতার দরবারে আদৌ পৌঁছানোর কথা নয়। ফলে সাধারণ জনতা গরু ভেড়া ছাগলের মতো ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে কপাল ঠুকে চোখবুঁজেই ভ্যাক্সিন নিতে বাধ্য হবে। হতেই থাকবে। আর একদল ভ্যাক্সিনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী নকল ভ্যাক্সিনের বাণিজ্যে ফুলে ফেঁপে উঠবে দ্রুত। এখনও যদি কারুর মনে হয়। নকল ভ্যাক্সিনের এই কারবার শুধুমাত্র একটি রাজ্যের এক শহরেই সীমাবদ্ধ। শুধুমাত্র একজন দেবাঞ্জন দেবের ভুয়ো পরিচয়ের পুষ্টি যোগাতে গড়ে উঠেছিল। তবে সত্যিই আর বলার কিছুই থাকতে পারে না। কোন দেশেই রাষ্ট্রশক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদত ছাড়া দুর্নীতির কারবার চলতে পারে না দিনের পর দিন বছরের পর বছর আর দশকের পর দশক ধরে। তা সে অযোধ্যায় রামমন্দির ঘিরে জমি কেনাবেচার দুর্নীতিই হোক আর কসবায় কর্পোরেশনের নামে ভ্যাক্সিন জালিয়াতির কারবারই হোক। সাধারণ মানুষের পক্ষে বৃথাই বুথে বুথে ভোটের লাইনে দাঁড়ানো। ক্ষমতায় কে গিয়ে বসলো। সেটা তত বড়ো কথা নয়। সাধারণ মানুষকে এই ভাবেই গরু ভেড়া ছাগলের মতোই জীবনযাপন করে যেতে হবে। অন্তত করোনার হাত থেকে বেঁচে গেলেও। দূর্নীতির হাত থেকে বাঁচার উপায় নেই কোন। তার উপযুক্ত কোন ভ্যাক্সিনও আবিষ্কার হবে না এদেশে।
২৪শে জুন’ ২০২১
কপিরাইট সংরক্ষিত